ভ্রূণীয় মেসোডার্ম উদ্ভূত বিশেষ ধরনের যোজক টিস্যু অস্থি (bone) ও তরুণাস্থি (cartilage) নির্মিত যে অঙ্গতন্ত্র দেহের কাঠামো নির্মাণ করে, অন্তঃস্থ নরম অঙ্গগুলোকে রক্ষা করে, দেহের ভার বহন করে এবং পেশি সংযোজনের জন্য উপযুক্ত স্থান সৃষ্টি করে, তাকে কঙ্কালতন্ত্র বলে।
মানব কঙ্কালতন্ত্রের অধিকাংশই অস্থি নির্মিত। মোট ২০৬টি অস্থি নিয়ে গঠিত সমগ্র কঙ্কালতন্ত্রকে প্রধান দুটি ভাগে ভাগ করা হয়েছে, যথা- ১. অক্ষীয় কঙ্কাল (Axial skeleton) এবং ২. উপাঙ্গীয় কঙ্কাল (Appendicular skeleton)।
অক্ষীয় কঙ্কালঃ কঙ্কালতন্ত্রের যে অস্থিগুলাে দেহের অক্ষ রেখা বরাবর অবস্থান করে কোমল, নমনীয় অঙ্গগুলােকে ধারণ করে ও রক্ষা করে এবং দেহ কাণ্ডের গঠনগুলাে সংযুক্ত করে অবলম্বন দান করে তাদের একত্রে অক্ষীয় কঙ্কাল বলে। অক্ষীয় কঙ্কাল প্রধানতঃ তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। যথা- (ক) করােটি, (খ) মেরুদণ্ড ও (গ) বক্ষপিঞ্জর
উপাঙ্গীয় কঙ্কালঃ মানুষের একজোড়া অগ্রপদ বা হাত, একজোড়া পশ্চাৎপদ বা পা, বক্ষ অস্থিচক্র (Pectoral girdle) ও শ্রোণিচক্র (Pelvic girdle) নিয়ে উপাঙ্গীয় কঙ্কালতন্ত্র গঠিত।
কঙ্কালতন্ত্রের কাজঃ
কঙ্কালতন্ত্র মানবদেহকে একটি নির্দিষ্ট আকার ও কাঠামো দান করে। এ তন্ত্র দেহের গুরুত্বপূর্ণ নরম অঙ্গগুলোকে সুরক্ষা প্রদান করে। কঙ্কালতন্ত্রের মাধ্যমে দেহের নড়াচড়া ও চলাচল সম্ভব হয়। অস্থিমজ্জা থেকে রক্তকণিকা উৎপন্ন হয় এবং অস্থি খনিজ লবণ সঞ্চয় করে।
অক্ষীয় কঙ্কাল (Axial Skeleton)
কঙ্কালতন্ত্রের যে অস্থিগুলো দেহের লম্বঅক্ষ বরাবর অবস্থান করে কোমল, নমনীয় ও গুরুত্বপূর্ণ রাখে এবং দেহকান্ডের বিভিন্ন অংশকে যুক্ত করে অবলম্বন দান করে সেগুলোকে একত্রে অক্ষীয় কঙ্কাল বলে। অক্ষীয় কঙ্কাল করোটি, মেরুদন্ড এবং বক্ষপিঞ্জর-এ বিভক্ত।
করোটি (Skull) : মুখমণ্ডলীয় ও করোটিকা অস্থি নিয়ে গঠিত মাথার কালিক গঠনকে করোটি বলে। ২৯টি অস্থি নিয়ে করোটি গঠিত । করোটির অস্থিগুলো করোটিকা বা খুলির অস্থি এবং মুখমন্ডলীয় অস্থি এ দুভাগে বিভক্ত।
ক.করোটিকা (Cranium) : করোটির যে অংশ মস্তিষ্ককে আবৃত করে রাখে তাকে করোটিকা বলে। ছয় ধরনের মোট আটটি সুগঠিত, চাপা শক্ত অস্থি নিয়ে করোটিকা গঠিত। অস্থিগুলো খাঁজকাটা কিনারাযুক্ত হওয়ায় একত্রে ঘন সন্নিবেশিত ও একে অন্যের সাথে সূচার সন্ধির (suture joint) মাধ্যমে দৃঢ়সংলগ্ন থাকে। করোটিকা যে সব অস্থি নিয়ে গঠিত সেগুলো হচ্ছে- কপাল নির্মাণকারী বড় ঝিনুকের মতো একটি ফ্রন্টাল (frontal), চারকোণা প্লেটের মতো দুটি প্যারাইটাল (parietal), চার অংশে বিভক্ত দুটি টেমপোরাল (temporal), খোলসের মতো একটি অক্সিপিটাল (occipital), ডানার মতো একটি স্ফেনয়েড (sphenoid) এবং ছিদ্রাল আড়াআড়ি প্লেটের মতো একটি এথময়েড (ethmoid)।
কাজ : করোটিকা মস্তিষ্ককে আবৃত ও সুরক্ষিত করে।
খ.মুখমণ্ডলীয় অস্থি (Facial bones) : করোটিকার সামনের ও নিচের দিকের অংশ মুখমন্ডল। একটি জোড়অস্থি বা ম্যাক্সিলা (উর্ধ্বচোয়াল), U আকৃতির একটি ম্যান্ডিবল (mandible; নিম্নচোয়াল) চারকোণা দুটি জাইগোম্যাটিক (zygomatic), আয়তাকার দুটি ন্যাসাল (nasal) সম্বলিত ল্যাক্রিমাল (lacrimal), চারকোণা একটি ভোমার (vomer) এবং অনুলম্ব প্লেটে গঠিত দুটি প্যালেটিন (palatine) নিয়ে মুখমণ্ডল গঠিত।
২৪
২৫
২৭
২৯
মেরুদন্ড (Vertebral Column) : অ্যাটলাস (atlas) থেকে কক্কিক্স (coccyx) পর্যন্ত প্রলম্বিত, সুষুম্নাকান্ড (spinal cord)-কে ঘিরে অবস্থিত একসারি কশেরুকা নিয়ে গঠিত এবং দেহের অক্ষকে অবলম্বনদানকারী অস্থিময় ও নমনীয় গঠনকে মেরুদণ্ড বলে। মেরুদন্ডকে শিরপাড়া, স্পাইন, স্পাইনাল ক্যাম প্রভৃতি বিভিন্ন নামে অভিহিত করা হয়। ৩৩টি অনিয়ত আকৃতির অস্থি নিয়ে মেরুদণ্ড গঠিত । মেরুদন্ডের প্রত্যেকটি অস্থিখন্ডকে কশেরুকা (vertebra, বহুবচনে vertebrae) বলে ।
মেরুদন্ডের কাজঃ
*দেহকান্ডের সুষ্ঠু সঞ্চালনে মজবুত ও নমনীয় অবলম্বন হিসেবে কাজ করে।
*সুষুম্না কান্ড ও সুষুম্না স্নায়ুমূলকে বেষ্টন ও রক্ষা করে।
*মাথাকে অবলম্বন দেয় এবং পিভট (pivot)-এর মতো কাজ করে।
*দেহের ভঙ্গি দানে ও চলাফেরায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
*পর্শুকা সংযোগের ক্ষেত্র সৃষ্টি করে দেহের অক্ষরূপে কাজ করে।
একটি আদর্শ কশেরুকার গঠন (An ideal vertebral structure):
দেহের বিভিন্ন অঞ্চলের এমনকি একই অঞ্চলের বিভিন্ন কশেরুকায়ও পার্থক্য দেখা যায়। তা সত্ত্বেও সকল কশেরুকাই একটি মৌলিক গড়নের উপর প্রতিষ্ঠিত। নিচে মানুষের একটি আদর্শ কশেরুকার (মধ্য-বক্ষদেশীয় কশেরুকা) বর্ণনা দেয়া হলো ।
সেন্ট্রাম (Centrum) বা ভার্টিব্রাল বডি (Vertebral body) : এটি কশেরুকার বৃহত্তম ও সম্মুখস্থ স্থূল অংশ, দেখতে ডিম্বাকার রডের একটি খন্ডের মতো । কোমলাস্থি নির্মিত সিমফাইসিস (symphysis) বা আন্তঃকশেরুকীয় চাকতি (intervertebral disc)-র সাহায্যে সমস্ত কশেরুকার দেহ পরস্পরের সঙ্গে আটকে থাকে সেন্ট্রাম শক্ত, পুরু ও স্পঞ্জি অস্থিতে গঠিত ।
আর্চ (Arch) : এটি কশেরুকা-দেহের পৃষ্ঠতলে অবস্থিত রিংয়ের মতো। আর্চ নিম্নোক্ত অংশগুলো ধারণ করে।
পেডিকল (Pedicle) : কশেরুকা-দেহের উভয় পশ্চাৎ-পার্শ্ব থেকে উত্থিত ও পিছনে বর্ধিত খাটো শক্ত গঠন ৷
ট্রান্সভার্স প্রসেস (Transverse process) : উভয় পাশে পেডিকল ও ল্যামিনার সংযোগস্থল থেকে উত্থিত পার্শ্বীয় প্রবর্ধন।
ল্যামিনা (Lamina) : উভয় পাশে ট্রান্সভার্স ও স্পাইনাস প্রসেসের মাঝখানে অবস্থিত চওড়া, চাপা, তির্যক ও ঢাল পেটের মতো অস্থি ।
আর্টিকুলার প্রসেস (Articular process) : উভয় পাশে ল্যামিনা ও পেডিকলের সংযোগস্থল থেকে উদগত একটি সুপিরিয়র ও একটি ইনফিরিয়র আর্টিকুলার প্রসেস। একটি কশেরুকার সুপিরিয়র আর্টিকুলার প্রসেস অন্য কশেরুকার ইনফিরিয়র আর্টিকুলার প্রসেসের সঙ্গে যুক্ত থাকে ।
স্পাইনাস প্রসেস (Spinous process) : দুই ল্যামিনির (ল্যামিনার বহুবচন) সংযোগস্থল থেকে একটি পশ্চাৎ মধ্যরেখীয় প্রবর্ধন যা নিম্নমুখী প্রসারিত । ২য়-৬ষ্ঠ সারভাইকাল কশেরুকার এ প্রসেস প্রান্তের দিকে দ্বিখন্ডিত।
কশেরুকার ছিদ্রপথ ও নালি : পেডিকলের ঊর্ধ্ব ও নিম্নদেশে যে খাঁজ (notch) থাকে সম্মিলিতভাবে ইন্টারভার্টিব্রাল ফোরামেন (intervertebral foramen) বা নিউরাল ছিদ্র (neural foramen) গঠন করে। এ ছিদ্রের ভিতর দিয়ে সুষুম্না স্নায়ু ও রক্তবাহিকা অতিক্রম করে। কশেরুকার যে বড় ছিদ্রটি সামনে দেহ, পিছনে আর্চ ও পাশে পেডিকলে নির্মিত, তাকে ভার্টিব্রাল ফোরামেন (vertebral foramen) বলে। সকল কশেরুকার ছিদ্র সম্মিলিতভাবে ভার্টিব্রাল ক্যানেল ( vertebral canal) নির্মাণ করে। এর ভিতরে ঝিল্লি বা মেনিনজেস সহ সুষুম্না কান্ড (spinal cord) ও রক্তনালিকা সুরক্ষিত থাকে।
কশেরুকার প্রকারভেদ (Types of Vertebrae):
অবস্থান অনুযায়ী কশেরুকাগুলোকে নিম্নোক্ত ৫টি অঞ্চলে ভাগ করা হয়ে থাকে;
১.সারভাইকাল (গ্রীবাদেশীয়) কশেরুকা (Cervical vertebrae) — ৭টি
২.থোরাসিক (বক্ষদেশীয়) কশেরুকা (Thoracic vertebrae) —১২টি
৩.লাম্বার (কটিদেশীয়) কশেরুকা (Lumbar vertebrae) —৫টি
৪.স্যাক্রাল (শ্রোণিদেশীয়) কশেরুকা (Sacral vertebrae) —১টি (৫টি একীভূত)
৫.কক্কিজিয়াল (পুচ্ছদেশীয়) কশেরুকা (Coccygeal vertebrae)—১টি (৪টি একীভূত)
পরিণত বয়সে স্যাক্রাল কশেরুকাগুলো একীভূত হয়ে স্যাক্রাম (sacrum) এবং কক্কিজিয়ালগুলো কক্কিক্স (coccyx) গঠন করে । ফলে, সর্বমোট কশেরুকার সংখ্যা কমে ২৬টি হয়।
বক্ষপিঞ্জর (Thoracic case):
দেহের পশুকাগুলো একদিকে থোরাসিক কশেরুকা ও অন্যদিকে স্টার্ণামের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যে খাঁচার মতো আকৃতি দান করে, তাকে বক্ষপিঞ্জর বলে। মানুষের বক্ষপিঞ্জর একটি উরঃফলক বা স্টার্ণাম (sternum), ১২ জোড়া পর্শুকা (ribs) এবং ১২টি থোরাসিক কশেরুকা নিয়ে গঠিত হয়।
স্টার্ণামঃ বুকের কেন্দ্রীয় সম্মুখ অংশে অবস্থিত চাপা অস্থিটি স্টার্ণাম। এটি অংশে বিভক্ত-উপরের ত্রিকোণাকার ম্যানুব্রিয়াম; মাঝের লম্বা দেহ; এবং নিচের ক্ষুদ্র জিফয়েড প্রসেস। ম্যানুব্রিয়াম দেহের সাথে সূক্ষ্মকোণ সৃষ্টি করে সম্মুখে প্রসারিত।স্টার্ণামের ঊর্ধ্ব কিনারায় একটি তথাকথিত জুগুলার নচ এবং পার্শ্ব কিনারায় ক্ল্যাভিকলের এবং ৭ জোড়া পশুকার খাঁজ থাকে।
পর্শুকাঃ পর্শুকা গুলো লম্বা, সরু, চাপা ও বাঁকা অস্থি। মানুষের দেহে ১২ জোড়া পর্শুকা থাকে। একটি আদর্শ পশুকা পশ্চাৎপ্রান্তে ফ্যাসেটবাহী মস্তক (ক্যাপিচুলাম), ক্রেস্টবাহী গ্রীবা, সংযোগী তলসহ টিউবার্কল এবং কোণ সৃষ্টি করে বাঁকানো দেহ নিয়ে গঠিত। মস্তক থোরাসিক কশেরুকার দেহের সাথে এবং টিউবার্কল দিয়ে একই কশেরুকার ট্রান্সভার্স প্রসেসের সঙ্গে যুক্ত থাকে । পর্ত্তকার সম্মুখ প্রান্ত তরুণাস্থিময়। প্রথম ৭ জোড়া পশুকা এদের তরুণাস্থি দিয়ে স্টার্ণামের সাথে যুক্ত থাকে, এগুলো আসল (প্রকৃত) পর্শুকা । বাকি ৫ জাড়া (৮ম-১২শ) স্টার্ণামের সাথে যুক্ত নয় বলে তা নকল পর্শুকা। ৮ম, ৯ম ও ১০শ পশুকা উপরস্থিত পর্শকার তরুণাস্থির সাথে একীভূত হয়ে কোস্টাল আর্চ (costat arch) নির্মাণ করে। ১১শ ও ১২শ পর্শুকা সামনে মাংসপেশিতে উন্মুক্ত থাকে। এগুলো সরল, ক্ষুদ্র এবং ভাসমান পর্শুকা নামে অভিহিত। প্রকৃত কশেরুকার দৈর্ঘ্য উপর থেকে নিচে ক্রমশ বাড়তে থাকে, কিন্তু নকল পর্শুকার ক্ষেত্রে ঘটে উল্টো ঘটনা
পর্শুকার অন্তর্তলের নিচের কিনারায় কোস্টাল খাদে স্নায়ু ও রক্তবাহিকা অবস্থান করে। প্রথম পর্শুকাজোড়ার উপরতলে পেশি সংযোজনের জন্য দুটি এবং সাবক্ল্যাভিয়ান ধমনি ও শিরা ধারণের জন্য দুটি খাদ থাকে। বহিঃ ও অন্তঃ ইন্টারকোস্টাল পেশি প্রতি দুই কশেরুকার মধ্যে তির্যকভাবে বিন্যন্ত । উপরে ও নিচে দুই কোস্টাল তরুণাস্থির মধ্যবর্তী ফাকা স্থানকে ইন্টারকোস্টাল স্পেস বলে।
বক্ষপিঞ্জরের কাজঃ হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস প্রভৃতি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ কে সুরক্ষিত রাখে।
উপাঙ্গীয় কঙ্কাল (Appendicular Skeleton) :
ঊর্ধ্বাঙ্গ (দুই বাহু ও বক্ষ-অস্থিচক্র) ও নিম্নাঙ্গ (দুই পা ও শ্রোণী অস্থিচক্র)-এর অস্থিগুলোকে একত্রে উপাঙ্গীয় কঙ্কাল বলে।
ঊর্ধ্বাঙ্গের অস্থিসমূহঃ
বক্ষ-অস্থিচক্র ও দুবাছ নিয়ে ঊর্ধ্বাঙ্গ গঠিত। দেহের উভয় পাশের ৩২টি করে মোট ৬৪টি অস্থি উর্ধ্বাঙ্গের অন্তর্গত।
ক. বক্ষ-অস্থিচক্র (Pectoral Sirdle) মানুষের বক্ষ-অস্থিচক্র ২ জোড়া অস্থি নিয়ে গঠিত, যথা-একজোড়া ক্ল্যাভিকল (clavicle) ও একজোড়া স্ক্যাপুলা(scapula)।
কাভিকল দেখতে ইটালিক '/' এর মতো বাঁকা অস্থি। এটি একটি দেহ ও দুটি প্রান্ত, যথা স্টার্ণাল (স্টার্ণামের ম্যানুরিয়ামে যুক্ত থাকে) এবং অ্যাক্রোমিয়াল প্রসেস (স্ক্যাপুলায় যুক্ত থাকে) নিয়ে গঠিত।
স্ক্যাপুলা দেখতে চাপা ও ত্রিকোণা অস্থি। এর একটি সম্মুখ বা কোস্টাল তল (costal surface), একটি পশ্চাৎ তল বা কোরাকয়েড এসেস, একটি অ্যাক্রোমিয়াল প্রসেস এবং গ্লেনয়েড গহ্বর নামে একটি সংযোগী অবতল আছে।
সম্মুখ তল পর্ত্তকাগুলোর দিকে মুখ করে থাকে। এতে সাবস্ক্যাপুলার ফসা (subscapular fossa) নামে একটি অবতল অংশ আছে। পশ্চাত্তল স্ক্যাপুলার কাঁটা (spine of scapula) অস্থির পশ্চাত্তলকে সুপ্রাস্পাইনাস (supraspinous) ও ইনফ্রাস্পাইনাস = (infraspinous) ফসায় বিভক্ত করে। প্লেনয়েড গহ্বরে হিউমেরাসের মস্তক আটকানো থাকে।
খ. বাহুর অস্থি (Bones of Forelimb):
বাহুতে ৩টি অঞ্চলে ভাগ করা যায়, যথা ঊর্ধ্ববাহু, সম্মুখবাহু এবং হাতের অস্থি।
১. ঊর্ধ্ববাহুর অস্থি বা হিউমেরাস (Humerus) : (ঊর্ধ্ববাহু হিউমেরাস নামে একটি লম্বা, নলাকার হাড়ে গঠিত। এর ঊর্ধ্বপ্রান্তে রয়েছে মসৃণ, গোল মস্তক যা স্ক্যাপুলার গ্লেনয়েড গহ্বরে প্রবিষ্ট থাকে । তা ছাড়াও আছে ছোট ও বড় টিউবার্কল এবং এর মাঝখানে অ্যানাটমিক গ্রীবা (anatomic neck) নামে একটি খাঁজ। টিউবার্কলের নিচে যে সরু অংশ থেকে হিউমেরাসের মূল দেহ গঠিত হয়। তাকে সার্জিকাল গ্রীবা (surgical neck) বলে (কারণ, দুর্ঘটনায় এ অংশেই সচরাচর ফাটল ধরে)। মূল দেহের মধ্যভাগে পেশি সংযুক্তির জন্য খসখসে ডেলটয়েড রিজ (deltoid ridge) রয়েছে। দেহের কিনারা নিম্নপ্রান্তে এসে এপিকন্ডাইল (epicondyle) গঠন করে। এপিকন্ডাইলের মাঝে কন্ডাইল (condyle) অবস্থিত যা উত্তল ক্যাপিচুলাম ও কপিকলের মতো ট্রকলিয়া (trochlea) নিয়ে গঠিত। সংযোগী তল হিসেবে এ প্রান্তে করনয়েড ও ওলেক্রেনন ফসা-ও থাকে।
২.সম্মুখবাহুর অস্থি বা রেডিয়াস-আলনা (Radius-Ulna) : সম্মুখবাহু দুটি লম্বা, নলাকার ও ঘনসংলগ্ন অস্থি নিয়ে গঠিত, যথা- আলনা ও রেডিয়াস। অন্তর্ভাগের অস্থিটি আলনা। এর ঊর্ধ্বপ্রান্তে করনয়েড প্রসেস ও ওলেক্রেনন প্রসেস, একটি ট্রকলিয়ার নচ ও একটি টিউবারোসিটি (অর্বুদ) অবস্থিত । নিম্নপ্রান্তমাথা ও স্টাইলয়েড প্রসেস-এ বিভক্ত। রেডিয়াসের ঊর্ধ্বপ্রান্তে রয়েছে একটি খাঁজসহ মাথা, গ্রীবা ও অর্বুদ এবং নিম্নপ্রান্তে কার্পাল অস্থির সংযোগী তল ও একটি স্টাইলয়েড প্রসেস। ঊর্ধ্বপ্রান্তে রেডিয়াস ও আলনা অ্যানুলার পেশিতে এবং বাকি অংশ অ্যান্টিব্রাকিয়াল ঝিল্লি দিয়ে যুক্ত থাকে।
৩. হাতের অস্থি : কব্জি, করতল ও আঙ্গুল নিয়ে হাত গঠিত।
কব্জিঃ দুসারিতে ৪টি করে মোট ৮টি ছোট ছোট বিভিন্ন আকৃতির কার্পাল (carpal) অস্থিতে কব্জি গঠিত। গোড়ার দিকের সারিতে থাকে স্ক্যাফয়েড (নেভিকুলার), লুনেট, ট্রাইকুয়েট্রাল ও পিসিফর্ম অস্থি, এবং প্রান্তের দিকে থাকে ট্র্যাপেজিয়াম, ট্র্যাপেজয়েড, ক্যাপিটেট ও হ্যামেট অস্থি।
করতলঃ করতলের ৫টি অস্থিকে মেটাকার্পাল (metacarpal) বলে।) এগুলো লম্বা ও নলাকার এবং একটি গোড়া, শ্যাফট ও মাথা নিয়ে গঠিত ।
আঙ্গুলঃ আঙ্গুলের অস্থিগুলোকে ফ্যালাঞ্জেস (phalanges; একবচনে ফ্যালাংক্স) বলে। এগুলো খাটো ও নলাকার। বৃদ্ধাঙ্গুলে ২টি এবং অন্য আঙ্গুলগুলোতে ৩টি করে ফ্যালাঞ্জেস থাকে।
শ্রোণী-অস্থিচক্র ও দুপা নিয়ে নিম্নাঙ্গ গঠিত। দেহের উভয় পাশের ৩১টি করে মোট ৬২টি অস্তি নিম্নাঙ্গের অন্তর্গত। নিচে এদের সংক্ষিপ্ত বর্ণনা দেয়া হলো ।
ক. শ্রোণী-অস্থিচক্র (Pelvic Girdle) : এটি ইলিয়াম (ilium), ইন্ডিয়াম (ischium) ও পিউবিস (pubis) অস্থি নিয়ে গঠিত। প্রাপ্ত বয়স্ক মানবে এ অস্থিগুলো একত্রিত হয়ে নিতম্বাস্থি (hip bone) গঠন করে। দুটি নিতম্বাস্থি একত্রে মিলে গঠিত হয়। শ্রোণী-অস্থিচক্রইলিয়ামটি দেহ ও ডানায় বিভক্ত। ডানার কিনারাকে ইলিয়াক খুঁটি (ক্রেস্ট) বলে । কিনারা দুটি উঁচু অংশে সমাপ্ত হয়েছে, এদের সম্মুখ সাপারয়র ও পশ্চাৎ সুপিরিয়র কাঁটা বলে। এদের নিচে থাকে সম্মুখ ইনফিরিয়র ও পশ্চাৎ ইনফিরিয়র কাঁটা। তা ছাড়াও ইলিয়ামে আর্কুয়েট রেখা, ইলিয়াক ফসা, গ্লুটিয়াল রেখা ও একটি অরিকুলার সংযোগী তল থাকে । পিউরিসটি দেহ ও দুটি শাখায় বিভক্ত। শাখা দুটিকে ঊর্ধ্ব ও নিম্ন র্যামি (একবচনে র্যামাস) বলে) ঊর্ধ্ব র্যামাসে একটি পিউবিক অর্বুদ (টিউবারোসিটি) এবং একটি পিউবিক ঝুঁটি থাকে।
ইন্ডিয়ামটি দেহ, ঊর্ধ্ব ও নিম্ন ব্র্যামি, ইন্ডিয়াল অর্বুদ এবং ইন্ডিয়াল কাঁটা নিয়ে গঠিত। কাঁটাটি বড় ইন্ডিয়াল খাঁজকে ছোটটি থেকে পৃথক করেছে। পিউবিক ও ইস্টিয়াল র্যামি অবটুরেটর ছিদ্রকে বেষ্টন করে রাখে। ছিদ্রটি প্রায় সম্পূর্ণরূপে যোজক টিস্যুর ঝিল্লিতে আবৃত। ইলিয়াম, ইন্ডিয়াম ও পিউবিসের সংযোগস্থলে অ্যাসিটাবুলাম (acetabulum) নামে একটি অগভীর অংশ রয়েছে। এতে ফিমারের মস্তক আটকানো থাকে।
শ্রোণী-অস্থিচক্রের কাজ : বস্তিকোটর, মূত্রাশয়, অস্ত্রের নিম্নাংশ প্রভৃতি অঙ্গে অবলম্বন দান করা, ভার বহন করা এবং সুরক্ষা করা শ্রোণীচক্রের কাজ। ফিমারের মস্তক অ্যাসিটালাম-এ যুক্ত থাকে।
খ. পা-এর অস্থি (Bones of Hindlimb) মানুষের পা ঊর্ধ্ব পাঁ, নিম্ন পা ও চরণ নিয়ে গঠিত।
১. ঊর্ধ্ব পা-এর অস্থি বা ফিমার (Femur) : ঊর্ধ্ব পা-এর অস্থিকে ফিমার বলে। এটি মানবদেহের সবচেয়ে দীর্ঘ ফিমার অস্থি। এর ঊর্ধ্বপ্রান্তে একটি গোল মস্তক, গ্রীবা এবং ছোট ও বড় ট্রোক্যান্টার অবস্থিত। দেহটি শক্ত ও নলাকার। এর পশ্চাৎতল একটি অমসৃণ আলযুক্ত। নিম্নপ্রান্ত দুটি কন্ডাইলবিশিষ্ট। দুই কন্ডাইলের মাঝখানে থাঁকে আন্তঃকন্ডাইলার ছিদ্র, প্যাটেলার সংযোগী তল এবং দুপাশে একটি করে এপিকন্ডাইল নামে সামান্য উঁচু
জায়গা।
ফিমারের প্রান্তে প্যাটেলা নামে একটি প্রায় ত্রিকোণাকার অস্থি অবস্থিত। প্যাটেলাএকটি সিসাময়েড অস্থি, কারণ এর উৎপত্তি পেশির টেনডন থেকে। প্যাটেলার পশ্চাৎভাগের ঊর্ধ্বাংশ ফিমারের সাথে এবং নিম্নাংশ টিবিয়ার সাথে সংযুক্ত।
২. নিম্ন পা-এর অস্থি বা টিবিয়া-ফিবুলা (Tibia-fibula): নিম্ন পা-এ দুটি অস্থি থাকে, যথা-টিবিয়া ও ফিবুলা। ঢিবিয়া বেশি মোটা। এর ঊর্ধ্বপ্রাপ্ত দুটি কাইল, একটি অন্তঃকন্ডাইলার স্ফীতি, ফিমারের সাথে সংযুক্ত হওয়ার জন্য দুটি সংযোগী তল এবং পেশি সংযোজনের জন্য একটি টিউবারোসিটি বহন করে। টিবিয়ার দেহ ত্রিধারবিশিষ্ট। এর সম্মুখ কিনারা ঝুঁটি নামে পরিচিত। টিবিয়ার নিম্নপ্রান্তে ম্যালিওলাস নামে দুপাশে। উঁচু অংশ থাকে। এতে ট্যালাসের (টার্সাল অস্থি) সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য সংযোগী তলও ফিবুলা দেখতে একটি দীর্ঘ ষষ্টির মতো। এর মস্তক চোখা ধরনের। ঊর্ধ্বপ্রান্তে টিবিয়ার সংযোগের জন্য একটি সংযোগী তল থাকে। নিচের প্রান্তে থাকে ম্যালিওলাস।
৩. চরণ : গোড়ালি, পদতল ও আঙ্গুল নিয়ে চরণ গঠিত।
গোড়ালি ও পদতলের পৃষ্ঠভাগ গঠিত হয় ৭টি বিভিন্ন আকৃতির টার্সাল (tarsal) নিয়ে। একটি করে ক্যালকেনিয়াস, ট্যালাস, কিউবয়েড, নেভিকুলার ও ৩টি কুনিফর্ম। মেটাটার্সাল-এর সংখ্যা ৫। এগুলো নলাকার ও সামান্য লম্বা এবং পদতল গঠন করে। পায়ের আঙ্গুলের অস্থিগুলো ফ্যালাঞ্জেস (phalanges)। এগুলো হাতের গঠিত। পা-এর অস্থিগুলো পরস্পরের সাথে সন্ধির মাধ্যমে যুক্ত। এদের ভেতর নিজস্ব আপু আপেক্ষা খাটো। বৃদ্ধাঙ্গুল ২টি এবং বাকি আঙ্গুলগুলো ৩টি করে ফ্যালাঞ্জেসে হাট সন্ধি ও গোড়ালি সন্ধি সবচেয়ে বড়।
পায়ের কাজ পাদুটি প্রত্যক্ষভাবে ভারবহন করে ও
গমনের সাথে জড়িত।
অস্থি ও তরুণাস্থি হচ্ছে বিশেষ ধরনের যোজক টিস্যু যাদের মাতৃকা (matrix) কঠিন বা অর্ধকঠিন পদার্থে তৈরি। এদের কঙ্কাল যোজক টিস্যু বলে।
অস্থি (Bone)র গঠন : অস্থি হচ্ছে দেহের সবচেয়ে সুদৃঢ় টিস্যু । এর মাতৃকা বা ম্যাট্রিক্স বিভিন্ন জৈব (৪০%) ও অজৈব (৬০%) পদার্থে গঠিত হওয়ায় সম্পূর্ণ টিস্যুটি কঠিন আকার ধারণ করে। জৈব অংশটি কোলাজেন (collagen) ও অসিমিউকয়েড (osimucoid)-এ গঠিত। অজৈব অংশটিতে প্রধানত ক্যালসিয়াম ফসফেট ও ক্যালসিয়াম কার্বোনেট রয়েছে। মাতৃকায় প্রধানত তিন ধরনের অস্থিকোষ থাকে- অস্টিওব্লাস্ট (osteoblast), অস্টিওক্লাস্ট (osteoclast) এবং অস্টিওসাইট (osteocytes)। পেরিঅস্টিয়াম (periosteum) নামক তন্তুময় যোজক টিস্যু নির্মিত পাতলা ও মসৃণ আবরণ প্রতিটি অস্থিকে ঘিরে রাখে। অস্থিতে প্রচুর রক্ত সরবরাহ বিদ্যমান। এ টিস্যু মেরুদন্ডী প্রাণীর দৈহিক কাঠামো নির্মাণ করে।
নিরেট অস্থি (Compact bone) : নিরেট অস্থির ম্যাট্রিক্স কতকগুলো স্তরে (৫-১৫টি) সাজানো। স্তরগুলোকে ল্যামেলি (lamellae) বলে। ল্যামেলি একটি সুস্পষ্ট নালির চারদিকে চক্রাকারে বিন্যস্ত। কেন্দ্রীয় এ নালিটি হচ্ছে হ্যাভারসিয়ান নালি (haversian canal)। প্রতিটি হ্যাভারসিয়ান নালি ও একে বেষ্টনকারী ল্যামেলির সমন্বয়ে একটি হ্যাভারসিয়ান তন্ত্র (haversian system) গড়ে উঠে। প্রত্যেক ল্যামেলায় (একবচন) ল্যাকুনা (lacuna) নামে কতগুলো ক্ষুদ্র গহ্বর পাওয়া যায়। অস্থিকোষ ল্যাকুনার ভিতরে অবস্থান করে। প্রতিটি ল্যাকুনার চারদিক থেকে সূক্ষ্ম কতকগুলো নালিকা বেরোয় । এদের ক্যানালিকুলি (canaliculi) বলে। এসব নালিকার মাধ্যমে একটি হ্যাভারসিয়ান তন্ত্রের বিভিন্ন ল্যাকুনা পরস্পরের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। অস্থির অভ্যন্তরে হ্যাভারসিয়ান নালিগুলো পরস্পরের আড়াআড়ি নালি দিয়ে যুক্ত থাকে৷ এসব নালিকে বলে ভকম্যানস ক্যানাল (Volkmann’s canal)। হ্যাভারসিয়ান তন্ত্রসমূহের অন্তর্বর্তীস্থানে কঠিন ম্যাট্রিক্স ও অস্টিওসাইট উপস্থিত থেকে অস্থি সুদৃঢ় করে। অস্থির কেন্দ্রস্থলে যে গহ্বর থাকে তার নাম মজ্জা গহ্বর। গহ্বরটি লাল বা হলুদ মজ্জা (red or yellow bone marrow)-য় পূর্ণ থাকে ফিমার ও হিউমেরাস এ ধরনের অস্থি।
স্পঞ্জি অস্থি (Spongy bone) : নিরেট অস্থির অভ্যস্তরে বিদ্যমান স্পঞ্জি অস্থি অপেক্ষাকৃত হালকা, অসংখ্য কুঠুরিযুক্ত স্পঞ্জের মতো। এসব অস্থির গঠন স্পঞ্জ বা মৌচাকের মতো বলে এদেরকে ক্যানসেলাস (cancellous) বা ট্রাবেকুলার (trabecular) অস্থি বলা হয়। মানবদেহের কঙ্কালতন্ত্রের মোট ওজনের প্রায় ২০% স্পঞ্জি অস্থি। স্পঞ্জি অস্থির গাঠনিক ও কার্যকরি এককে ট্রাবেকুলা (trabecula) বলে যা ল্যামিলি, অস্টিওসাইট, ল্যাকুনি ও ক্যানালিকুলির সমন্বয়ে গঠিত। ট্রাবেকুলাসমূহের মধ্যবর্তী স্থান লোহিত অস্থিমজ্জা দ্বারা পূর্ণ থাকে। অস্থি আবরণ পেরিঅস্টিয়াম থেকে রক্তনালিকা ট্রাবেকুলাতে প্রবেশ করে অস্থির কোষমূহকে পুষ্টি সরবরাহ করে। স্পঞ্জি অস্থিতে ক্যালসিয়াম লবণের পরিমাণ কম থাকে। এতে হ্যাভারসিয়ান তন্ত্র থাকে না। স্তন্যপায়ীদের করোটিকা, চ্যাপ্টা হাড়, বৃহৎ অস্থির প্রান্তভাগ এবং পাখিদের সকল অস্থি স্পঞ্জি ধরনের। শিশুদের প্রায় সকল অস্থিই স্পঞ্জি প্রকৃতির।
অস্থির কাজঃ
*অস্থি দেহের কাঠামো গঠন করে এবং দেহকে নির্দিষ্ট আকার ও আকৃতি প্রদান করে।
*দেহের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গাদি (যেমন-মস্তিষ্ক, ফুসফুস, হৃৎপিণ্ড, সুষুম্নাকান্ড প্রভৃতি) অস্থি নির্মিত কঙ্কাল দ্বারা সুরক্ষিত থাকে।
*অস্থিসন্ধি গঠন এবং পেশির সাথে সমন্বয় দ্বারা অস্থি নির্মিত কাঙ্কালতন্ত্র প্রাণীর চলনে প্রধান ভূমিকা রাখে।
*অস্থির ভিতরে অবস্থিত লোহিত অস্থিমজ্জা (red bone marrow) থেকে প্রতিনিয়ত লোহিত রক্তকণিকা সৃষ্টি হয়। পীত অস্থিমজ্জা (yellow bone marrow) সঞ্চিত চর্বির আধার হিসেবে কাজ করে।
*রক্ত থেকে দূষিত পদার্থ নিষ্কাশন করে।
*ক্যালসিয়াম, পটাসিয়াম, ফসফরাস জাতীয় খনিজ লবণ অস্থিতে সঞ্চিত হয়।
*কঙ্কালতন্ত্রের সবচেয়ে ছোট অস্থি অস্তঃকর্ণের ম্যালিয়াস, ইনকাস ও স্টেপিস শ্রবণ প্রক্রিয়ায় অংশ নেয়।
তরুণাস্থিঃ টিস্যুর ম্যাট্রিক্স বা মাতৃকা কনড্রিন (chondrin) নামে অর্ধ-কঠিন ও স্থিতিস্থাপক পদার্থে গঠিত। কনড্রিন কনডোমিউকয়েড (chondromucoid) ও কনড্রোঅ্যালবুনয়েড (Chondroalbunoid) নামক দধরনের প্রোটিন গঠিত। লোহিকোষকে কনডোসাইট (chondrocyte) বলে। ম্যাট্রিক্সে উত্তত বিক্ষিপ্ত কিছু গহ্বর দেখা যায়। প্রত্যেকটি গর্বের ল্যাকুনা (Abacuna) নামে পরিচিত। প্রতিটি ল্যাকুনা এক বা একাধিক কনড্রোসাইট বহন করে। ল্যাকুনাগুলো তরলে পূর্ণ থাকে। পেরিকন্ডিয়াম (perichondrium) নামক তন্তুময় আবরণীতে তরুণাস্থি আবৃত থাকে।
কাজ : ম্যাট্রিক্সের বৈশিষ্ট্যের জন্য অন্যান্য টিস্যু অপেক্ষা অনেক বেশি চাপ ও টান (tension) সহ্য করতে পারে। বিভিন্ন অঙ্গের আকৃতি দান করে। অস্থিসন্ধিতে অবস্থান করে অস্থির প্রান্তভাগকে ঘর্ষনের হাত থেকে রক্ষা করে। মেরুদন্ডী প্রাণিদের ভ্রূণীয় কঙ্কাল ও কন্ড্রিকথিস জাতীয় মাছের অন্তঃকঙ্কাল গঠন করে।
তরুণাস্থির প্রকারভেদ : ম্যাট্রিক্সের গঠনের উপর ভিত্তি করে নিচে বর্ণিত চার ধরনের তরুণাস্থি পাওয়া যায়ঃ
ক.স্বচ্ছ বা হায়ালিন (Hyaline) তরুণাস্থিঃ এর ম্যাট্রিক্স ঈষৎ স্বচ্ছ , নীলাভ, নমনীয় এবং তত্ত্ববিহীন। স্তন্যপায়ীর নাক, শ্বাসনালি, স্বরযন্ত্র প্রভৃতি স্থানে এবং ব্যাঙ ও হাঙরের ভ্রূণে বা পরিণত দেহে প্রচুর পরিমাণে এ ধরনের তরুণাস্থি পাওয়া যায়।
খ. স্থিতিস্থাপক (Elastic) বা পীত-তন্তুময় তরুণাস্থিঃ এর মাটির অসচ্ছ ও হাল্কা হলুদ বর্ণের। ম্যাট্রিক্সে স্থিতিস্থাপক পীততত্ত্ব জমা থাকে। বাইরের দিকের তুলনায় ভেতরের তত্ত্বগুলো ক্ষাক ঘনবিন্যস্ত। বহিঃকর্ণ বা পিনা, ইউস্টেশিয়ান নালি, আলজিহ্বা প্রভৃতি অংশে এ ধরনের তরুণাস্থি পাওয়া যায়। 1
গ. শ্বেত-তন্তুময় (White fibrous) তরুণাস্থিঃ এর ম্যাট্রিক্সে নির্মিত তন্ত্র সমান্তরালে বিন্যস্ত থাকে। বিশেষ কয়েকটি সন্ধিতে, পরিমাণ সাদা বা শ্বেদ বর্ণের, অশাখ, অস্থিতিস্থাপক, কোলাজেন যেমন-দুটি কশেরুকার মধ্যবর্তী অঞ্চলে এ ধরনের তরুণাস্থি পাওয়া যায়।
ঘ. মাট্রিক্সে প্রচুর ক্যালসিয়াম কার্বোনেট জমা থাকে, ফলে অনেকটা চুনময় বা ক্যালসিফাইড (Calcified) তরুণাস্থি : এ ক্ষেত্রে শাহর মতো শক্ত রূপ ধারণ করে। হিউমেরাস ও ফিমারের মস্তকে এধরনের তরুণাস্তি পাওয়া যায়।
পেশি টিস্যুঃ মেসোডার্ম থেকে উদ্ভূত যে টিস্যু সংকোচন-প্রসারণক্ষম ও অসংখ্য তন্তুর সমন্বয়ে গঠিত তাকে পেশি বা পেশি টিস্যু বলে।
পেশির সাধারণ বৈশিষ্ট্য : মায়োব্লাস্ট (myoblast) নামক আদিকোষ রূপান্তরিত হয়ে তন্তুর মতো লম্বা পেশিকোষ সৃষ্টি করে । তাই পেশিকোষকে পেশিতন্ত্র বলে প্রতিটি কোষ সুস্পষ্ট নিউক্লিয়াসযুক্ত এবং সারকোলেমা (sarcolemma) নামক ঝিলিতে আরত: এর ভেতরের সাইটোপ্লাজমকে সারকোপ্লাজম (sarcoplasm) বলে। সারকোপ্লাজমের মধ্যে পরস্পর সমান্তরালভাবে অবস্থিত অসংখ্য মায়োফাইব্রিল (myofibril) নামক সূক্ষ্ণ তন্তু থাকে। গুচ্ছবদ্ধ অ্যাকটিন (actin) ও মায়োসিন (myosin) নামক প্রোটিন ফিলামেন্ট দিয়ে মায়োফাইব্রিল গঠিত। পেশিটিস্যু প্রায় ৭৫ শতাংশ পানি ও অবশিষ্টাংশ কঠিন পদার্থে গঠিত।
কাজ : পেশিই প্রাণিদেহের বিভিন্ন অঙ্গের সঞ্চালনের জন্য দায়ী। অস্থিসংলগ্ন পেশির সংকোচন-প্রসারণের ফলে প্রাণী স্থানান্তরে গমন করতে পারে।
গঠন, অবস্থান ও কাজের তারতম্যের ভিত্তিতে পেশিকে তিন শ্রেণিতে ভাগ করা যায় ১. মসৃণ বা অনৈচ্ছিক; ২. হৃৎপেশি এবং ৩. রৈখিক বা ঐচ্ছিক ।
১. মসৃণ (ভিসেরাল) বা অনৈচ্ছিক পেশি (Non-striated or Involuntary muscle): এ পেশির কোষগুলো মাক আকৃতির, ১৫-২০০ um পর্যন্ত দীর্ঘ। কোষের চওড়া অংশের ব্যাস ৮-১০ umi প্রত্যেক কোষে নিউক্লিয়াসের সংখ্যা একটি এবং এটি কোষের চওড়া অংশে অবস্থান করে। কোষের আবরণী বা সারকোলেমা অস্পষ্ট। কোষের সাইটোপ্লাজম বা সারকোপ্লাজম-এ অসংখ্য অতি সূক্ষ্ম মায়োফাইব্রিল পেশিতন্তুর দৈর্ঘ্য বরাবর বিস্তৃত। মায়োফাইব্রিলে কোনো আড়াআড়ি রেখা দেখা যায় না। পৌষ্টিকনালি, রক্তনালি, শ্বাসনালি, মূত্রথলি, জরায়ু প্রভৃতি অঙ্গের প্রাচীরে এ পেশি পাওয়া যায় মসৃণ পেশিগুলো আন্তরযন্ত্রীয় (visceral) অঙ্গের প্রাচীরে থাকে বলে এগুলোকে ভিসেরাল পেশিও বলে।
কাজ : এ টিস্যুর সংকোচন-প্রসারণ ক্ষমতা ধীর ও দীর্ঘস্থায়ী। বিভিন্ন বস্তুর যাতায়াত নিয়ন্ত্রণে এ টিস্যু অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। যেমন- খাদ্যবস্তু এ টিস্যুর মাধ্যমে পেরিস্ট্যালসিস (peristalsis) প্রক্রিয়ায় পৌষ্টিকনালির উপরের অংশ থেকে নিচের দিকে ধাবিত হয়। এ পেশির সংকোচন প্রাণীর ইচ্ছানির্ভর নয় বলে একে অনৈচ্ছিক পেশি বলা হয়ে থাকে।
২. হৃৎপেশি বা কার্ডিয়াক পেশি (Cardiac muscle) : অনৈচ্ছিক গঠনের দিক থেকে এটি অনেকটা রৈখিক পেশির মতো। পেশিতন্তুর মায়োফাইব্রিলের গায়ে আড়াআড়ি রেখা থাকে; কিন্তু পেশিতন্তুগুলো পরস্পর অনিয়মিতভাবে যুক্ত থেকে জালের মতো গঠন সৃষ্টি করে। সারকোলেমা বেশ সূক্ষ্ম এবং নিউক্লিয়াসটি কোষের কেন্দ্রস্থলে অবস্থান করে। কোষগুলোর দৈর্ঘ্য প্রায় ০.৮ মিলিমিটার এবং ব্যাস ১২-১৫ um হয়। কোষগুলোর সংযোগস্থলে কোষপর্দা ঘন সন্নিবিষ্ট হয়ে এক বিশেষ অনুপ্রস্থ রেখার সৃষ্টি করে । একে ইন্টারক্যালেটেড ডিস্ক Intercalated disc) বলে) এ ডিস্ক হৃৎপেশির অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। একমাত্র হৃৎপিন্ডের প্রাচীরে এ ধরনের পেশি টিস্যু পাওয়া যায়।
কাজ : এ টিস্যুর সংকোচন-প্রসারণ ক্ষমতা পরিমিতভাবে দ্রুত, কখনও ক্লান্ত হয় না । হৃৎপিণ্ডের সংকোচন-প্রসারণ খাটিয়ে প্রাণিদেহে রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া নিয়ন্ত্রণ করা হৃৎপেশির কাজ। হৃৎপেশির কার্যকারিতা প্রাণীর ইচ্ছানির্ভর নয় তাই কাজের দিক থেকে এ পেশি অনৈচ্ছিক ।
৩. কঙ্কাল বা রৈখিক (চিহ্ণিত) বা ঐচ্ছিক পেশি (Striated or Voluntary muscle) : প্রাণিদেহের যে অংশগুলোকে সাধারণত আমরা মাংস বলে থাকি প্রকৃতপক্ষে সেগুলোই কঙ্কাল বা রৈখিক বা চিহ্ণিত পেশি। কোষগুলো দেখতে নলাকার (cylindrical), ১-৪ সেন্টিমিটার এবং ১০-৪০ মাইক্রোমিটার ব্যাসবিশিষ্ট হয়। তাই কোষগুলোকে সূক্ষ্ম তন্তুর দেখায় এবং পেশিতন্তু (muscle fibre) বলে আখ্যায়িত করা হয়। তন্তুগুলো আলাদা বা বিক্ষিপ্ত না থেকে গুচ্ছবদ্ধ থাকে। পেশিতন্তুর এধরনের গুচ্ছকে (bundle) ফ্যাসিকুলাস (fasciculus; বহুবচনে fasciculi) বলা হয়। প্রতিটি গুচ্ছ পেরিমাইসিয়াম (perimycium) নামক যোজক টিস্যু নির্মিত আবরণে আবৃত। অনেকগুলো ফ্যাসিকুলি একত্রিত হয়ে একটি বড় গুচ্ছ গঠন করে। এপিমাইসিয়াম (epimyerum) নামক আরেক ধরনের যোজক টিস্যু নির্মিত আবরণে আবৃত থাকে। ঐচ্ছিক পেশিগুলো দেহাভ্যন্তরে এভাবে গুচ্ছাকারে অবস্থান করে। প্রতিটি পেশিতন্তু সারকোলেমা (sarcolemma) নামক সুস্পষ্ট এক আবরণে আবৃত থাকে। এর ঠিক নিচে কয়েকশ গোলাকার বা ডিম্বাকার নিউক্লিয়াস দেখা যায়। প্রতিটি পেশিকোষের অভ্যন্তরে কতকগুলো অতি সূক্ষ্ম তত্ত্ব ব মায়োফাইব্রিল (myofibril) পাওয়া যায়। (প্রধানত অ্যাকটিন (actin) ও মায়োসিন (myosin) নামক প্রোটিন দিয়ে মায়োফাইব্রিল গঠিত হয়। অণুবীক্ষণযন্ত্রের নিচে এ উপতত্ত্বগুলোর সমস্ত দেহ জুড়ে পর্যায়ক্রমিকভাবে অবস্থিত কতকগুলো অনুপ্রস্থ রেখা দেখা যায়। এ রেখাগুলো (দাগগুলো) থাকার জন্যই এ পেশিটিস্যুকে রৈখিক পেশি বা চিহ্নিত পেশি বলে।
অবস্থান : বড় বড় অস্থির সংযোগস্থলে এ ধরনের পেশি বেশি পাওয়া যায়, আর সে কারণেই এদের কঙ্কাল পেশি (skeletal muscle)-ও বলা হয়ে থাকে। চোখে, জিহ্বায়, গলবিলেও এগুলো অবস্থান করে।
কাজ : এ ধরনের পেশির সংকোচন-প্রসারণ ক্ষমতা খুব দ্রুত ও শক্তিশালী । হাত ও পা-এর বড় বড় অস্থিসহ দেহের অন্যান্য অস্থির সঞ্চালনের জন্য ঐ পেশিটিস্যুই দায়ী। প্রাণীর চলন এ পেশির মাধ্যমে ঘটে। এ পেশির কাজ প্রাণীর ইচ্ছা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত হয়, তাই রৈখিক পেশিকে ঐচ্ছিক পেশি বলে আখ্যায়িত করা হয়।
পেশিতে টান পড়ে কিন্তু ধাক্কা দেয় না (Muscle can Pull but can not Push) : পেশি আমাদের চলন ও ভঙ্গিমা নিয়ন্ত্রণ করে, মানবদেহের স্বাভাবিক কর্মকান্ড পরিচালনায় প্রয়োজনীয় ভূমিকা পালন করে। পেশির ব্যবহার এক-দুদিনের নয়, নিত্যদিনের। প্রতিটি কাজ পেশি নির্ভর। আমরা জার্নি মানবদেহে ৩ ধরনের পেশি আছে। মসৃণপেশি, হৃৎপেশি ও কঙ্কালপেশি।
পেশি কীভাবে কাজ করে সে বিষয়ে আমাদের অনেকেরই স্পষ্ট ধারণা নেই। আমরা প্রত্যেকদিন কাজ করি। যেমন-হাত ভাঁজ করা-সোজা করা বিষয়টি দেখতে যত সহজ সাবলিল মনে হয়, এর গূঢ়তত্ত্ব ঠিক ততোখানি কঠিন। এর মূল রহস্য হচ্ছে সংশ্লিষ্ট পেশিগুলো সংকুচিত হয় ও টান দেয়, কিন্তু ধাক্কা দেয় না বরং প্রসারিত থাকে। মানবদেহের কঙ্কালিক পেশিগুলো জোড়ায় জোড়ায় থাকে, এদের কাজ পরস্পর বিপরীতমুখি (প্রতিপক্ষীয় জোড়, antagonistic pairs)। বাইসেপস (biceps) ও ট্রাইসেপস (triceps) বাহুর অন্যতম প্রধান পেশি। বাইসেপস হচ্ছেনিম্নবাহুর রেডিয়াসের উপরে অবস্থিত পেশি যা কনুই সন্ধিকে বাঁকিয়ে নিম্নবাহুকে ভাঁজ হওয়া নিম্নবাহুকে টেনে সোজা করে উর্ধ্ববাহু থেকে দূরে সরিয়ে নেওয়া। পেশিগুলো এমনভাবেই গঠিত যাতে কেবল সংকুচিত হতে পারে (অর্থাৎ টান দিতে পারে), ধাক্কা দিতে পারে না। পেশি নিজে বাঁকা হয় না, সন্ধিকে টেনে বাঁকিয়ে আনে। এভাবে বাঁকিয়ে এনে সন্ধি-কোণ কমিয়ে দেওয়ার কাজে নিয়োজিত বাইসেপসকে বাড়িয়ে দিয়ে অর্থাৎ সোজা করিয়ে দেওয়ায় ট্রাইসেপককে এক্সটেন্সর (extensor) বলে । অ্যাকটিন ও মায়োসিন এ দুধরনের প্রোটিন থাকে বলে পেশি টানতে পারে। এসব প্রোটিন পেশিকোষের একপ্রান্ত থেকে অপরপ্রান্ত পর্যন্ত প্রসারিত থাকে। সংশ্লিষ্ট পেশির প্রতিটি কোষ মস্তিষ্কের কোনো অংশ থেকে সংকোচনের সংকেত পেলে মস্তিষ্কের অন্য অংশ থেকে পৃথক বৈদ্যুতিক উদ্দীপনাগুলোকে সমন্বিত করে 'টান' দেওয়ার কাজটি সম্পন্ন করে।
হাড়কে আগের অবস্থানে ফিরিয়ে নিতে বিপরীতধর্মী পেশিও সম্মিলিতভাবে একই কাজ করে অর্থাৎ টেনে সোজা করে দেয়। এ কারণেই বলা হয় যে পেশিতে টান পড়ে কিন্তু ধাক্কা দেয় না ।
কঙ্কালের কার্যক্রম এবং 'রডস ও লিভার তন্ত্র
(The action of Skeleton and "Rods & Lever" System) : কঙ্কালিক পেশি আলাদাভাবে কাজ করতে পারে না। একটি পেশি যখন কঙ্কালের সঙ্গে যুক্ত থাকে তখন স স্থান ও বাকরি নির্ধারণ করে দেয় এর বল, গতি ও সঞ্চালনের মাত্রা কেমন হবে। এসব বৈশিষ্ট্য স্বাধীন এবং এদের নির্ভর করে পেশি ও কঙ্কালতন্ত্রের সাধারণ গঠনের উপর। নির্দিষ্ট একটি পেশির সংকোচনে যে বল, গতি ও 1 দিক প্রকাশ পায় তা বদলে দেওয়া যাবে যদি ঐ পেশিকে একটি লিভারের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া যায়। পিতার (lover) এমন একটি অনমনীয় (red) যা সন্ধির মাধ্যমে সৃষ্ট একটি স্থায়ী পয়েন্ট বরাবর ঘুরতে সক্ষম। শিশুদের দোলায়মান বাউলায়মান দাঁড়ান বা হাঁটা লিডার ক্রিয়ার পরিচিত উদাহরণ। লিভারের মাধ্যমে (১) আরোপিত (applied) দিক (2) আরোপিক বলের ফলে সৃষ্ট চলনের দূরত্ব ও গতি এবং (৩) আরোপিত বলের কার্যকর শক্তি (effective strength) পরিবর্তিত হয়ে যেতে পারে। অর্থাৎ পেশিটানের ক্রিয়া কঙ্কালতন্ত্রের বিভিন্ন অংশে যেভাবে প্রকাশিত হয় তবে কঙ্কালতন্ত্রে বড় ও লিভার তন্ত্রের প্রভাব এবং আমাদের হাত-পা'গুলোকে মেশিন ছাড়া আর কিছু ভাবার উপায় নেই। লিভারের প্রতি যে কোন বলপ্রয়োগকে বলে প্রচেষ্টা (effort)। যে বলপ্রয়োগে লিভারের চলন বাধাগ্রস্থ হয় (যেমন - দন্ডের উপর ওজনের কারণে নিম্নমূখি বল প্রয়োগ) তাকে বলে ভার (load) বা প্রতিবন্ধক (resistance)) পেশিশু সংকোচন হচ্ছে প্রচেষ্টা, আর এতে সংশ্লিষ্ট দেহের অংশটি হচ্ছে ভার বা বাধা। শরীরের হাড়গুলো লিভার (যান্ত্রিক কৌশল) হিসেবে কাজ করে, ফলে গতি বা শক্তির এক যান্ত্রিক সুবিধার সৃষ্টি হয়। অর্থাৎ লিভারের ব্যবহারে একটি ক্ষুদ্র ফল (force) বিরাট বল-এ পরিবর্তিত হতে পারে। পায়ের পেশির সামান্য সংকোচনের ফলে পায়ের শীর্ষে বৃহত্তর সঞ্চালন একটি ফুটবলকে সজোরে দূরে পাঠাতে সাহায্য করে। এটাই হচ্ছে যান্ত্রিক সুবিধা (mechanical advantage) ।
লিভারের গঠন (Structure of Lever):
একটি লিভার ৪টি অংশ দিয়ে গঠিতঃ
১. লিভার-বাহ (Lever arms) হাড়গুলো লিভার-বাহু হিসেবে কাজ করে;
২. পিট (Pivot)- যে অস্থিসন্ধিকে কেন্দ্র করে লিভারের কাজ কর্ম পরিচালিত হয়;
৩. প্রচেষ্টা (Effort )- তার সরানো বা নড়ানোর জন্য পেশি যে বল (force) সরবরাহ করে; এবং
৪. ভার (Load)- দেহের কোনো অংশের ওজন যা সরাতে হবে বা উঠাতে হবে কিংবা দেহের ভেতরে বা বাইরে নিতে হবে।
লিভারের প্রকারভেদ(Types of Lever):
পিট, প্রচেষ্টা ও ভার-এর অবস্থানের ভিত্তিতে লিভার নিচেবর্ণিত ৩ রকম ।
ক. প্রথম-শ্রেণির লিভার (First class lever): এ ধরনের লিভারে পিটটি ডার ও প্রচেষ্টার মাঝখানে অবস্থান করে। কাঁচি এ ধরনের লিভার, কিন্তু মানবদেহে প্রথম শ্রেণি লিভার দুর্লভ। একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, মাথা ও প্রথম কশেরুকার মধ্যবর্তী সন্ধিটি । এক্ষেত্রে মাথার খুলি হচ্ছে লিভার-বাহু; খুলি ও প্রথম কশেরুকা (অ্যাটলাস)-র মধ্যকার সন্ধিটি পিট; মাথার পেছনে অবস্থিত পেশি থেকে আসা পেশল ক্রিয়া হচ্ছে প্রচেষ্টা; এবং ভার হচ্ছে মাথার ওজন যা প্রচেষ্টার কর্মকান্ডে উঁচু হয়ে থাকে (ওজনের বিরুদ্ধে)। পেশি (প্রচেষ্টা) শিথিল হলে মাথা ঝুঁকে পড়ে। এ লিভারের মাধ্যমে অল্প বল প্রয়োগে বেশি ফল পাওয়া যায়।
খ. দ্বিতীয় শ্রেণির লিভার (Second-class lever): এ ধরনের লিভারে ভারের অবস্থান থাকে পিভট ও প্রচেষ্টার মাঝখানে। ঠেলাগাড়ি এর প্রকৃষ্ট উদাহরণ। ঠেলাগাড়ির মেঝেয় যে মাল রাখা হয় সেটি ভার। এ অংশটি থাকে পিডটরপী। হুইল আর প্রচেষ্টারপী ঠেলাচালকের হাতের মধ্যবর্তী স্থানে। পায়ের আঙ্গুলের ডগায় দাড়ালে দ্বিতীয় শ্রেণির লিভার সৃষ্টি। হয়। তখন আঙ্গুলের সন্ধিগুলো হয় পিট, দু'পা লিডার বাহু, কাফ পেশি ও গোড়ালির টেন্ডন প্রচেষ্টা (যখন কাফ সংকুচিত হয়) এবং দেহের ওজার (যা পেশি সংকোচনের ফলে উপরে উত্থিত হয়। এ ধরনের লিভারের পেশি সাহায্যে সামান্য প্রচেষ্টায় বেশি ওজনকে উপরে তুলে ধরা সহজ হয়।
গ. তৃতীয়-শ্রেণির লিভার (Third-class lever) : এ ধরনের লিভারের প্রচেষ্টা থাকে পিভট ও ভার-এর মাঝখানে । উদাহরণ হিসেবে নখ কাটার যন্ত্রের (nail flipper) কথা উল্লেখ করা যায়। মানবদেহে তৃতীয়-শ্রেণির লিভারের সংখ্যা | মাদক। একটি ভাঁজ করা বাহুকে তৃতীয়-শ্রেণির লিভার বলা যায়। এ ক্ষেত্রে কনুইয়ে রয়েছে পিভট (কনুই-সন্ধি), সম্মুখ বহু হচ্ছে লিভার-বাহু, বাইসেপস পেশি প্রচেষ্টার যোগান দেয়, আর সম্মুখ বাহু কিংবা কোনো ওজনদার বস্তুসহ সম্মুখ বচ্ছ হচ্ছে ভার। তৃতীয় শ্রেণির লিভারে প্রচেষ্টার অবস্থান ভার ও পিভটের মাঝে বলা হলেও প্রকৃতপক্ষে প্রচেষ্টা আরপিভট খুব কাছাকাছি অবস্থান করে। প্রচেষ্টার চেয়ে ভার বেশি হওয়ায় এ ক্ষেত্রে কোনো যান্ত্রিক সুবিধা পাওয়া যায় না। তবে বাইসেপস পেশির সামান্য সংকোচনে সম্মুখ বাহুতে বৃহত্তর সঞ্চালনের সৃষ্টি হয় বলে যান্ত্রিক অসুবিধাটুকু পূরণ হয়ে যায়। দ্রুতগতির সঞ্চালন (movement) সুবিধা পাওয়া যায় এ ধরনের লিভার থেকে।
হাটু সঞ্চালনে অস্থি ও পেশির সমন্বয় (Coordination of Bones and Muscles in the Knee Movement):
মানুষের চলনে শুধু পেশি নয়, পেশির সঙ্গে যুক্ত অস্থির ভূমিকাও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। অস্থি দেহের কঙ্কালতন্ত্র গঠন করে। কঙ্কালতন্ত্র দেহের অবয়বের কাঠামো। কাঠামোর উপরে আচ্ছাদন হিসেবে থাকে পেশিতন্ত্র (muscular system) এ পেশি ঐচ্ছিক (voluntary) প্রকৃতির হওয়ায় মানুষ দেহকে বা দেহের কোনো উপাঙ্গকে যথেচ্ছ আন্দোলিত করতে পারে। কন্ডরা বা টেন্ডন (tendon) দিয়ে পেশি অস্থির সংগে যুক্ত থাকে । তাই কোনো অঙ্গকে যথেচ্ছ পরিচালনা করা বা স্থানান্তরে নেওয়া পেশি-কঙ্কালতন্ত্রের (musculoskeletal system) পারস্পরিক ছন্দোবদ্ধ ক্রিয়াকলাপের উপর নির্ভরশীল। হাঁটু সঞ্চালনে অস্থি ও পেশি যেভাবে সমন্বয় সাধন করে তা নিচে সংক্ষেপে বর্ণনা করা হলো।
১. বক্রীকরণ পেশি : জানুসন্ধি (knee joint) পেছন দিকে বাঁকাতে দুটি পেশিগুচ্ছের প্রয়োজন হয়, এদের হ্যামস্ট্রিং পেশি (hamstring muscle) এবং গ্যাস্ট্রোকনেমিয়াস পেশি (gastrocnemius muscle) বলে ) হ্যামস্ট্রিং পেশি তিনটি পেশি নিয়ে গঠিত। এগুলো যথাক্রমে বাইসেপস ফিমোরিস (biceps femoris), সেমিমেম্ব্রোনোসার (semimembronosus) এবং সেমিটেন্ডিনোসাস (semitendinosus)। পেশিগুলো উরুর পেছনে থাকে। এগুলো শ্রোণীচক্রের ইশ্চিয়াম (ischium) অংশে উৎপন্ন হয়ে ফিমারের পেছন দিয়ে টিবিয়ার (tibia) উপরে যুক্ত হয়েছে। এদের সঙ্কোচনে ফিমার ও টিবিয়া কাছাকাছি আসে এবং হাঁটুসন্ধিতে ভাঁজ সৃষ্টি হয়।গ্যাস্ট্রোকনেমিয়াস পেশি টিবিয়ার পেছনে অবস্থিত পায়ের ডিম বা গুলির প্রধান পেশি। এটি ফিমারের কনডাইল (condyle) থেকে সৃষ্টি হয়ে টিবিয়ার পেছন দিয়ে গোড়ালিঅস্থি বা ক্যালকেনিয়াস (calcaneus) -এর সঙ্গে অ্যাকিলিস কন্ডরা (achilles tendon or calcanean tendon) দিয়ে যুক্ত হয়। এর সঙ্কোচনে ফিমার ও টিবিয়া নিকটবর্তী হয়, ফলে হাঁটুসন্ধি পেছন দিকে ভাঁজ হয়।
২. প্রসারণ পেশি : উরুর সামনে অবস্থিত চারটি পেশি নিয়ে গঠিত কোয়াড্রিসেপস ফিমোরিস (quadriceps femoris) হাঁটুসন্ধির প্রসারণ ঘটায়। এটি শ্রোণী থেকে উৎপন্ন রেকটাস ফিমোরিস (rectus femoris) এবং ফিমারের সামনে থেকে উৎপন্ন তিনটি ভ্যাসটি পেশি ভ্যাসটাস মিডিয়ালিস (vastas medialis), ভ্যাসটাস ল্যাটারালিস (vastas lateralis) এবং ভ্যাসটাস ইন্টারমিডিয়াস (vastas intermedius) নিয়ে গঠিত। এ তিনটি পেশি একসঙ্গে প্যাটেলা (patella)-র কন্ডরার মাধ্যমে টিবিয়ার সামনে যুক্ত হয়। এসব পেশির সঙ্কোচনে হাঁটুসন্ধির প্রসারণ ঘটে।
অস্থিভঙ্গ হচ্ছে এমন এক চিকিৎসাগত অবস্থা যেখানে রোগী অভিন্ন হাড়ের কোথাও ভেঙ্গে যাওয়াজনিত অসুস্থতায় ভোগে। প্রচন্ড শক্তি, চাপ কিংবা বিভিন্ন অসুখে (অস্টিওপোরোসিস, অস্থিক্যান্সার ইত্যাদি) ভঙ্গুর হয়ে যাওয়ায় অস্থিভঙ্গ অবস্থার সৃষ্টি হয়। আহভঙ্গ প্রধানত তিন ধরনের সাধারণ, যৌগিক ও জটিল। নিচে এদের বিবরণ দেওয়া হলো।
সাধারণ হাড়ভাঙ্গা (Simple Fracture )
যে ধরনের অস্থিভঙ্গে ভঙ্গ অস্থি চামড়া বিদীর্ণ করে বের হয় না তাকে সাধারণ অস্থিভঙ্গ বলে। এ ধরনের অস্থিভঙ্গে এ হাড় শুধু দুই টুকরা হয়ে যায়, এর বেশি কিছু নয়। হাড় ভেঙ্গে বাইরে বেরিয়ে আসে না বলে এ ধরনের অস্থিভঙ্গের আরেক নাম বন্ধ অস্থিভঙ্গ (closed fracture)
প্রাথমিক চিকিৎসা (First Aid):
অস্থিভঙ্গের মাত্রা ও সঠিক স্থান চিহ্নিত করতে হবে। আঘাতপ্রাপ্ত ব্যক্তির নড়াচড়া বন্ধ রাখতে হবে। সমস্ত ক্ষত পরিষ্কার করতে হবে। রক্ত সঞ্চালনে বাধা হতে পারে এমন টাইট জামা-কাপড়, গয়না-গাটি সরিয়ে ফেলতে হবে তা না। হলে ভাঙ্গা হাঁড়ে রক্ত সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাবে। ভাঙ্গা হাড় যথাস্থানে বসানোর জন্য তার সঙ্গে কাঠের খন্ড বা বাঁশের চটি বেঁধে দিতে হবে। রক্ত প্রবাহ ও সঞ্চালন পুনর্বার পরীক্ষা করতে হবে। ভাঙ্গা হাড়ের জায়গাটি যেন ফুলে না উঠে সে জন্য আঘাত পাওয়া জায়গা ৬-১০ ইঞ্চি উচুতে রাখতে হবে। অস্থিভঙ্গের জায়গায় বরফ দেওয়া যেতে পারে তবে দেখতে হবে জায়গাটি যেন ঠান্ডায় অসাঢ় না হয়ে যায়। হঠাৎ ও মারাত্মক আঘাত পেয়েছে আহত ব্যক্তি যেন এমনটি মনে না করে সে জন্য তাকে চাঙ্গা রাখতে হবে। এবং মাথা, ঘাড় ও শরীরের বিভিন্ন অংশ সাবধানে নড়াচড়া করতে হবে। আঘাতপ্রাপ্তির স্থল থেকে সরিয়ে ফেলতে হবে। পরবর্তী ধাপ হচ্ছে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যেতে হবে। চিকিৎসক প্লাস্টার লাগিয়ে প্রয়োজনীয় ওষুধের ব্যবস্থা ও চিকিৎসাপত্র দেবেন। দেখা গেছে, সাধারণ অস্থিভঙ্গ ৮ সপ্তাহের মধ্যে সেড়ে যায়।
যৌগিক হাড়ভাঙ্গা (Compound Fracture)
যৌগিক হাড়ভাঙ্গা উনন্মুক্ত হাড়ভাঙ্গা নামেও পরিচিত। সাধারণত খেলাধূলার সময় কিংবা সড়ক দুর্ঘটনায় এ ধরনের হাড়ভাঙ্গা ঘটে, তখন হাড়ের টুকরা চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে আসে। এটি বেশ জটিল হাড়ভাঙ্গা কারণ এতে প্রচুর পরিমাণ রক্তপাত হয় এবং দ্রুত সংক্রমণ ঘটে । যৌগিক হাড়ভাঙ্গার ক্ষেত্রেও সাধারণ হাড়ভাঙ্গার মতো প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া যেতে পারে, তবে তা ক্ষণকালীন। কারণ যৌগিক হাড়ভাঙ্গা এত গুরুতর যা অস্ত্রোপচার ছাড়া বিকল্প চিকিৎসা নেই।
যৌগিক হাড়ভাঙ্গার প্রকারভেদহাড়ভাঙ্গার প্রকৃতির ভিত্তিতে যৌগিক হাড়ভাঙ্গাকে ৩ ভাগে ভাগ করা যায়।
ধরন ১ : ক্ষতের পরিমাণ কম, চামড়ায় ১ সে.মি. এর বেশি ক্ষত দেখা যায় না এবং রক্তপাতও হয় কম।
ধরন ২ : ক্ষতের পরিমাণ বেশি, চামড়ায় ১ সে.মি.-এর বেশি ক্ষত, টিস্যুর ক্ষতি দেখা যায় না এবং চ তেমন ক্ষতি হয় না। র। অস্থিসন্ধিতে তা
ধরন ৩: এক্ষেত্রে চামড়া, টিস্যু ও হাড়ের মারাত্মক ক্ষতি হয়। রক্তপাত, সংক্রমণ এড়াতে দ্রুত চিকিৎসাকেন্দ্রে নিয়ে যেতে হয়।
(হাড় ভেঙ্গে টিস্যু ও চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে আসা, প্রচুর রক্তপাত ও যন্ত্রণাময় ক্ষত সৃষ্টি হওয়া যৌগিক হাড়ভাঙ্গার লক্ষণ।)
জটিল হাড়ভাঙ্গা (Complex Fracture)
জটিল হাড়ভাঙ্গার ফলে বেশ কয়েকটি হাড়, অস্থিসন্ধি, টেন্ডন ও লিগামেন্ট ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যৌগিক হাড়ভাঙ্গার মতো এক্ষেত্রে হাড়ের টুকরা চামড়া ভেদ করে বেরিয়ে থাকে। জটিল হাড়ভাঙ্গাকে নানা ধরনে ভাগ করা যায়, এর মধ্যে প্রধান দুটি হচ্ছেঃ
১. বহু-টুকরাবিশিষ্ট (Multifragmentary fracture) : এক্ষেত্রে হাড় অনেকগুলো ছোট টুকরায় পরিণত হয়।
২. কয়েক-টুকরাবিশিষ্ট (Comminuted fracture) : এ ধরনের জটিল হাড়ভাঙ্গায় হাড়ের টুকরাগুলো আগের ধরনের চেয়ে সামান্য বড় এবং সংখ্যায় কম থাকে।
জটিল হাড়ভাঙ্গার লক্ষণাদি দেখে চিকিৎসক দ্রুত অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা নেবেন, তবে তার আগে এক্স-রে রিপোর্ট দেখে নিতে হয়। এ ধরনের হাড়ভাঙ্গা থেকে রক্ষা পেতে হলে সড়ক পথে সাবধানে চলাচল, উঁচু স্থান থেকে সাবধানে লাফ দেওয়া, বয়স্কদের হাড় ভঙ্গুর হওয়ায় তাঁদের আরও বেশি সতর্ক থাকতে হবে।
দেহের সকল অস্থিসন্ধি অনন্য গড়ন ও সঞ্চালন ক্ষমতা নিয়ে মানবদেহকে সুস্থতা ও কর্মক্ষমতা দান করে। য পায়ের লম্বা অস্থিগুলো বেশি ব্যবহৃত হয় বলে ক্ষতির ঝুঁকির মুখেও থাকে বেশি। আঘাতের লক্ষণের প্রকাশ ঘটে যায় আ ব্যথা প্রকাশের মাধ্যমে । অস্থিসন্ধি আঘাতপ্রাপ্ত হলে অস্থি, লিগামেন্ট ও অস্থিসন্ধির অন্যান্য টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
১. স্থানচ্যুতি (Dislocation )
একটি অস্থিসন্ধিতে অবস্থিত দুটি অস্থির মধ্যে একটি সরে গেলে স্থানচ্যুতি ঘটে।হাড়ের স্থানচ্যুতির প্রথম ও প্রধান লক্ষণ হচ্ছে সেই হাড়টি ব্যবহার করা অসম্ভব। আঙ্গুল স্থানচ্যুত হলে পুরো হাতই। প্রায় অকোজো হয়ে পড়ে। কাধ ও নিতম্ব স্থানচ্যুতি ঘটলে হাত ও পায়ের সঞ্চালন বন্ধ হয়ে যায়। স্থানচ্যুতি প্রচন্ড ব্যথা। ৪ বিভিন্ন মাত্রার কালশিরার সৃষ্টি করে। স্থানচ্যুতির কারণে হাড় অস্থিসন্ধি থেকে সরে যায় বলে জায়গাটি উঁচু হয়ে থাকে[বন্ধফলক : ভাঙ্গা হাড় যথাস্থানে বসানোর জন্য এর সঙ্গে যে কাঠের খন্ড বেঁধে দেওয়া হয়। পা বা নিতম্বে স্থানচ্যুতি হলে আহত ব্যক্তি হাঁটতে পারবে না। এ অবস্থা মোকাবিলায় ট্রেনিংপ্রাপ্ত ব্যক্তির সাহায্য নিতে হবে। যদি মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে, চামড়া ফেটে যদি হাড় বেরিয়ে আসে তাহলে তাৎক্ষণিক বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের হাতে আহত ব্যক্তিকে তুলে দিতে হবে।
২. মচকানো (Sprains)
(অস্থিসন্ধিতে আঘাতের ফলে সন্ধিকে অবলম্বন দানকারী লিগামেন্টে সৃষ্টি হয় অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা টান কিংবা লিগামেন্ট ছিঁড়েও যেতে পারে। এমন অবস্থাকে সাধার জামে মচকানো নামে অভিহিত করা হয়। লিগামেন্ট হচ্ছে টিস্যু- নির্মিত স্কুল ব্যান্ড যা সন্ধিকে নির্দিষ্ট দিকে সঞ্চালনে অনুমতি দেয়। কিছু সন্ধি বিভিন্ন দিকে সঞ্চালিত হতে পারে। এ কারণে লিগামেন্টের একাধিক গুচ্ছ অস্থিসন্ধিকে সঠিক বিন্যাসে ধরে রাখে। যখনই অস্থিসন্ধির একটি লিগামেন্টে অতিরিক্ত টান পড়ে বা ছিঁড়ে যায় তখনই মচকানো ঘটে। বলা যেতে পারে, মচকানোর প্রাথমিক ধাপে লিগামেন্ট তন্তু সটান হয়ে পড়ে; দ্বিতীয় ধাপে লিগামেন্টের কোনো অংশে চির ধরে; এবং শেষ ধাপে লিগামেন্ট সম্পূর্ণ ছিড়ে যায়।
মচকানোর স্থান
মচকানোর ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটে গোড়ালিতে।হাঁটুর সামনের দিকে অবস্থিত লিগামেন্ট (anterior cruciate ligament, ACL) সম্পূর্ণ ছিঁড়ে গেলে সবচেয়ে ক্ষতিকর মচকানো ঘটে।মচকানোর প্রথম লক্ষণ হচ্ছে ব্যথা।মচকানোর জায়গায় ব্যথা ও ফুলে উঠার সঙ্গে সঙ্গে জায়গা ঘিরে পেশি - নিচের আক্ষেপের সৃষ্টি হয়, ফলে পেশি শক্ত হয়ে যায়। ব্যথা, ফোলা ও পেশি-আক্ষেপ মিলে হাঁটা-চলাই দায় হয়ে পড়ে।
প্রাথমিক চিকিৎসা
চিকিৎসা নির্ভর করে মচকানোর ধরণ ও ব্যাপকতার উপর। চিকিৎসকের পরামর্শে নন-স্টেরয়ডাল (non- steroidal) ওষুধ খাওয়া যেতে পারে ব্যথা কমানোর জন্যে। ভারী কিছু বহন করার ক্ষেত্রে সাবধান থাকতে হবে। তবে প্রথমেই যা করতে হবে তা হচ্ছে মচকানো গুরুতর হলে দুশ্চিন্তা ঝেড়ে ফেলে প্রাথমিক চিকিৎসা ও বিশ্রাম নিতে হবে। গুরুতর মচকানোর ক্ষেত্রে বিশ্রাম নিতেই হবে এবং চারটি কাজ গুরুত্ব সহকারে করতে হবে।
৪টি কাজের ইংরেজী শব্দের প্রথম অক্ষর দিয়ে (RICE নাম দিয়ে প্রচলিত আছে; বিশ্রাম (Rest) + বরফ (lce) + ক্ষত পরিষ্কার, (Compression) + উচ্চতায় রাখা (Elevation ) = RICE )
বিশ্রাম : মচকানো রোগীকে বিশ্রামে রাখতে হবে। কোনো অতিরিক্ত চাপ দেওয়া যাবে না। গোড়ালি মচকানো খুব সাবধানে হাঁটতে হবে।
বরফ : মচকানোর সঙ্গে সঙ্গে ব্যথা ও ফোলা সীমিত রাখতে আক্রান্ত স্থানে বরফ দিতে হবে। এক নাগারে দিনে ৩-৪ বার ১০-১৫ মিনিট করে বরফ লাগাতে হবে; এর বেশি সময় দিলে কিন্তু হিতে বিপরীত হতে পারে।
ক্ষত পরিষ্কার : ক্ষত পরিষ্কার করে নতুন ব্যান্ডেজ এমনভাবে লাগিয়ে দিতে হবে যেন সন্ধিটি অবলম্বনে থাকে। এ কাজটি অভিজ্ঞ নার্স দিয়ে করানো ভাল।
অনড় ও উচ্চতায় রাখা : মচকানো সন্ধিটি দেহের বাকি অংশের চেয়ে সামান্য উঁচুতে তুলে রাখতে হবে। এতে ফোলা কমে যাবে।
Read more